মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ: লালমনিরহাটের মাটির নিচে একটি উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিলেছে।
সংশ্লিষ্ঠরা ধারণা করছেন, ধ্বংসাবশেষ প্রাথমিকভাবে দেখে এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কোন যুদ্ধ বিমানের মূল ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ হতে পারে।
আজ শনিবার (১৭ অক্টোবর) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থানীয় পুলিশ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রম ও ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং উদ্ধার কার্যক্রম দেখতে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার উৎসুক জনতা জড়ো হয়েছেন। ভিড় সামলাতে স্থানীয় পুলিশ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের বেগ পেতে হচ্ছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধারকৃত উপকরণের মধ্যে পাওয়া গেছে, একটি যুদ্ধবিমানের মূল ইঞ্জিন (প্রপেলার) ১টি, ২টি ল্যান্ডিং গিয়ার, ওয়েল বার্নিং এক্সজস্ট (সাইল্যান্সার), এমিউনেশন্স, ৫টি গান ও বিমানের টুকরো টুকরো কিছু যন্ত্রাংশ।
তবে বিমান কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার কাজ শেষ করে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে এটা কী ধরন বা কোন দেশের উড়োজাহাজ ছিল।
স্থানীরা বলছেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দর রানওয়ে থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে চাষের জমি খনন করছিলেন কিছু শ্রমিক। খোঁড়াখুড়ির সময় উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলে।
জমির মালিক রেজাউল করিম জানান, চাষের জমি নিচু করার জন্য মাটি কাটার সময় গতকাল শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরের পর সোহেল মিয়া নামে একজন শ্রমিক ৮ থেকে ১০কেজি ওজনের কিছু গুলি সদৃশ বস্তু প্রথমে দেখতে পান। এরপর আমাকে বিষয়টি অবহিত করলে লালমনিরহাট সদর থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে সেগুলো নিয়ে যায়। এরপর শনিবার সকালে বিমান বাহিনীর লোকজন, পুলিশ ও ডিসি অফিসের কর্মকর্তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে মাটি খুরে খুরে পাঁচফুট মাটির নিচ থেকে যুদ্ধ বিমানের বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছে। এখনও কাজ চলছে।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম বলেন, গতকাল ওই কৃষকের দেয়া খবরের সত্যতা পাওয়ার পর আমরা রাতেই লালমনিরহাট বিমানবাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর আজ শনিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান ইউনিটের একটি দল, পুলিশ, স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) টি এম রাহসিন কবির স্যারের উপস্থিতিতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান মাসুদ বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা বিমানের বেশকিছু অংশের জিনিসপত্র পেয়েছি। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পুলিশ ও বিমান বাহিনীর মাধ্যমে অবগত হয়েছি। শনিবার উদ্ধার কার্যক্রমে যেন কোনো প্রকার আইনগত বাধাবিপত্তি সৃষ্টি না সেজন্য নেজারত ডেপুটি কালেক্টর টিএম রাহসান কবিরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বিমানের ধ্বংসাবশেষ গুলো উদ্ধারের পর যদি জেলা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তাহলে সেগুলো জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করা হবে। আর যদি বিমান বাহিনী নিয়ে যায়, তারাও সেগুলো নিয়ে যেতে পারে। তবে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি ইউনিয়নে বিরাট এলাকাজুড়ে ১৯৩৯-৪০ সালে লালমনিরহাট বিমানবন্দর স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে সেটি পরিত্যাক্ত থাকলেও দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান দফতর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি সফল না হলেও বর্তমানে এখানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারো স্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের পাশেই ‘আর্মি এভিয়েশন স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পুলিশ, বিমান বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন উদ্ধার হওয়া যুদ্ধ বিমাণের ধ্বংসাবশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। তবে সেখানে পাইলটের কংকাল আছে কি না বা বিমানের ককপিট আছে কি না-বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।